Computer Tips

কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ | স্লো হলে করণীয়।

কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ গুলো কি কি? যদি কম্পিউটার স্লো হয়ে যায় তাহলে আমাদের করণীয় বিষয় গুলো কি? আজকের আলোচনা। আমরা যখন প্রথম দিকে একটি কম্পিউটার কিনি সেটা হোক ডেস্কটপ কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ কম্পিউটার নতুন অবস্থায় অনেক ভালো কাজ করে। কিন্তু একটা সময় এস কম্পিউটার অনেক স্লো হয়ে যায় একটুতেই হ্যাং ল্যাগ ইত্যাদি করে।

একটি কম্পিউটার সিস্টেম বিভিন্ন কারণে স্লো হতে পারে এর মধ্যে অন্যতম কারণ গুলো কী? এবং কিভাবে আমরা আমাদের কম্পিউটারকে ফাস্ট অর্থাৎ দ্রুত গতির রাখতি পারি সেই সম্পরকে জানবো। কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে করণীয় কি? ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেলটি।

কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ

আমি এইখানে কম্পিউটার বলতে বিশেষ করে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার হওয়া কম্পিউটারের কথা বলেছি। অর্থাৎ আমাদের দেশে ব্যবহৃত সাধারণ কম্পিউটার যেগুলো বেশির ভাগই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে সেইগুলো যার মধ্যে উইন্ডোজ ১০ অন্যতম। কম্পিউটার প্রথম কেনা অবস্থায় যেমন পারফোমেন্স দেয় সেটা এক সময় এসে আর দেয় না এর পিছে কিছু কারণ রয়েছে। আমাদের কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ এবং স্লো হলে কি করণীয় সেই সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলোঃ

১। পিসির ভেতর ধূলাবালি জমাঃ কম্পিউটার দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের ভেতর অনেক ধূলা বালি জমা হয়ে থাকে যেইগুলো হার্ডওয়্যারের কাজ গুলো করতে অসুবিধা করে। ডেস্কটপ কম্পিউটারের কেসিং এর ভিতর সব কিছু যেহেতু সেট করা থাকে সেইখানে সিপিইউ কুলার তারপর পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ফ্যান থাকে যেগুলো ঘুরার সময় ধূলাবালি টানবে এটা স্বাভাবিক। এছাড়াও সাধারণ ভাবে বাতাসের সাথে অনেক ধূলাবালি কম্পিউটারের ভেতর প্রবেশ করে।

ধুলাবালি শুধু কম্পিউটার না যেকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য শত্রু। দীর্ঘ দিন কম্পিউটার ব্যবহার করার পর যে সব ধূলাবালি জমে যায় সেইগুলো কম্পিউটার সিস্টেমকে সঠিক ভাবে কুলিং করতে বাধা দেয় যেটি কম্পিউটার স্লো হওয়ার একটি কারণ। অনেকেই আছে পিসি কেনার পর একবার পিসির ভেতরে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে না। তাই আপনার কম্পিউটারে যদি প্রচুর পরিমাণে ধূলাবালি জমে থাকে তাহলে সেই গুলো পরিষ্কার করুন।

পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখবেন শুকনা কাপড় দিয়ে মুছার চেষ্টা করবে। অনেকে কম্পিউটার খুলে পরিষ্কার করতে ভয় বা রিস্ক নিতে চাই না তারা কোন কম্পিউটার শপে গিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে আসবেন কিছু টাকা খরচ করে। এছাড়াও যদি আপনার কম্পিউটার যেখান থেকে কিনেছেন সেখানে নিয়ে যান তারা ফ্রি সার্ভিস দিলেও দিতে পারে। কিন্তু এই ভাবে কত যদি সাহস করে নিজে শিখে নিয়ে পরিষ্কার করেন তাহলে সেটি আপনার জন্যই ভালো।

২। সি ড্রাইভ ফুলঃ কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি কারণ হলো সি ড্রাইভ কে ফুল করে রাখা। কম্পিউটারের কাজ করার সময় বিভিন্ন সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম টেম্পোরারি অনেক ফাইল তৈরী করে থাকে যেগুলোর ডিফল্ট লোকেশন সি ড্রাইভ। তো যখন এই সি ড্রাইভ ফুল হয়ে থাকে তখন ফাইল গুলো তৈরী হতে পারে না বা এই ধরনের কোন সমস্যা হতে পারে তাই কিছু টা স্লো হয়ে যায়। দেখা যায় অনেকেই নিজের পার্সোনাল ফাইল গুলো সি ড্রাইভে রেখে দেয় যেটা করা উচিত না। সি ড্রাইভে পার্সোনাল ফাইল রাখলে যেমন হারানোর ভয় থাকে ঠিক তেমনি অযথা স্পেস খেয়ে বসে থাকে তাই সি ড্রাইভ ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন।

৩। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যারঃ অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার যেগুলো আপনি ব্যবহার করেন অথচ ইনস্টল করে রেখেছেন সেই সব সফটওয়্যার কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ হতে পারে। অযথা যেসব সফটওয়্যার গুলো ইনস্টল করে রেখেছেন সেই গুলো সম্পূর্ণ ভাবে আনইনস্টল করে দিন।তাছাড়া অযথা হার্ডওয়্যার রিসোর্স নিয়ে বসে থাকতে পারে সফটওয়্যার গুলো।

৪। স্টার্ট আপ সফটওয়্যারঃ প্রথম যখন ফ্রেশ অবস্থায় উইন্ডোজ সেটআপ করে থাকেন আপনার কম্পিউটারে তখন সেটি ওপেন হতে অনেক কম সময় নেয়। কিন্তু সময়ের সাথে যখন প্রয়োজনে বিভিন্ন সফটওয়্যার ইনস্টল করে থাকেন তখন কম্পিউটার চালু হওয়ার সময়টাও বাড়তে থাকে। তো এটি কেন হয়ে থাকে? আসলে যখন আপনি নতুন উইন্ডোজ সেটআপ করেন তখন তেমন কোন সফটওয়্যার ইনস্টল থাকে না যার ফলে যখন অন করেন তখন শুধু উইন্ডোজ লোড হয়।

কিন্তু যখন অন্যান্য সফটওয়্যার ইনস্টল করেন সেইগুলোর মধ্য কিছু সফটওয়্যার আছে যেগুলো কম্পিউটার অন হওয়ার সাথে মানে ঐ সময় অন হওয়া লাগে। কারণ কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো আমাদের বার বার ওপেন করার প্যারা থেকে রক্ষা করে থাকে অনেক সময়। যেমন বাংলা লেখার সফটওয়্যার অভ্র আমরা ওপেন না করতে অটো ওপেন হয়ে থাকে ফলে শর্টকাট চাপলে বাংলা লেখতে পারি। তো এই ধরনের যেসব সফটওয়্যার রয়েছে সেই গুলো কে স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার বলে।

কম্পিউটারে যত স্টার্টআপ প্রোগ্রাম হবে ততো বেশি সময় লাগবে কম্পিউটার অন হতে। তাই কম্পিউটার যেন ফাস্ট অন হয় অর্থাৎ ফাস্ট বুট হয় সেই জন্য Start Up প্রোগ্রাম যে গুলো দরকারী না তেমন সেইগুলো ডিজেবল করে দিন। এর জন্য টাস্ক ম্যানেজার ওপেন করুন দেখুন Start up নামে একটি ট্যাব রয়েছে সেখানে গেলে স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম গুলো দেখতে পারবেন। যেটি অফ করতে চান সেটির উপর মাউস কার্সর নিয়ে গিয়ে রাইট বাটন ক্লিক করে Disable করে দিন।

৫। ক্যাশ ফাইল ডিলিট না করাঃ কম্পিউটারের কাজ করার সময় অনেক টেম্পোরারি ফাইল তৈরী হয়ে যায় যেগুলো ডিলিট করা লাগে। কিন্তু অনেকেই আছে এই ফাইল গুলো ডিলিট করতে জানে না বা জেনেও করে না। তাই কম্পিউটারের টেম্পোরারি ফাইল নিয়মিত ডিলিট করুন। টেম্পোরারি ফাইল কিভাবে ডিলিট করতে হয়ত সেটি গুগল করে নিন।

৬। স্টোরেজ ডিভাইস হেলথঃ কম্পিউটারের স্টোরেজ ডিভাইস সেটা হোক হার্ড ডিস্ক বা এসএসডি বেশ কয়েক বছর হওয়ার পর অথবা অন্য কোন কারণে হেলথ কমে যায়। হেলথ কমে যায় বলতে হার্ড ডিস্ক বা এসএসডির বয়স হওয়ার সাথে সাথে এর কার্যক্ষমতা কমে যায় অনেক অংশ নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে ভালো ভাবে কাজ করে না। এই কারণেও আপনার কম্পিউটার স্লো হয়ে যেতে পারে। তাই নিয়মতি আপনার কম্পিউটারের স্টোরেজ ডিভাইস মানে হার্ড ডিস্ক বা এসএসডি এর হেলথ চেক করুন। যদি হার্ড ডিস্কের অবস্থা ভালো না হয় তাহলে নতুন একটি কিনে নিন তাহলে আগের থেকে কিছুটা ভালো পার্ফোমেন্স দেখতে পারবেন।

৭। ভারী সফটওয়্যার ব্যবহারঃ কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে যেসব সফটওয়্যার গুলো কম্পিউটার রান করতে পারবে না সেটি রান করার চেষ্টা করা অন্যতম। মনে করুন, আপনার ক্ষমতা হলো ৫০ কেজি চাউলের বস্তা বহন করার এখন যদি আপনার ঘারে ১০০ কেজির বস্তা চেপে দেওয়া হয় তাহলে কি পারবেন? না পারবেন না অথবা কষ্ট হবে অনেক। ঠিক আপনি যদি আপনার লো কনফিগারেশনের কম্পিউটারের ভারী ভারী গেমস ও সফটওয়্যার চালানোর চেষ্টা করেন তাহলে এটা স্বাভাবিক যে স্লো হবেই।

লেটেস্ট সফটওয়্যার ব্যবহারের চিন্তা বাদ দিয়ে আপনার কম্পিউটার জন্য যে ভার্সন উপযুক্ত ভালো চলে সেটি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। তাছাড়া কম্পিউটার স্লো হবে বা হ্যাং ল্যাগ দিবে।

৮। হার্ডওয়্যার সমস্যা থাকলেঃ কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার পুরাতন হয়ে যাওয়ার ফলে সেই গুল সঠিকভাবে আগের মতো কাজ নাও করতে পারে। অনেক সময় দেখায় যায় পাওয়ার সাপ্লাই, র‍্যাম, হার্ড ডিস্ক ইত্যাদির সমস্যার কারণে কম্পিউটার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আপনার যদি সব অপারেটিং যদি ঠিক থাকে তারপর ও যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে গেলে একবার পিসিটা চেকআপ করে নিয়ে আসবেন।

৯। ড্রাইভার সফটওয়্যারঃ আমাদের কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার গুলো সঠিকভাবে কাজ করারনোর জন্য ড্রাইভার সফটওয়্যারের ভূমিকা অনেক। অনেক সময় ড্রাইভার সফটওয়্যার ইনস্টল না থাকার কারণে বা ইনস্টল আছে কিন্তু আপডেট ভার্সন না তাহলে স্লো হলেও হতে পারে। তাই আপনার কম্পিউটারের ড্রাইভার সফটওয়্যার গুলো সঠিকভাবে ইনস্টল ও আপডেট করে দেখুন।

১০। ভাইরাসের কারণঃ কম্পিউটারে কোন ক্ষতিকারক ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার যদি প্রবেশ করে থাকে তাহলে এটি কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ হলে পারে। তাই ভালো কোন অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম দ্বারা কম্পিউটার স্ক্যান করে নিয়ে ব্যবহার করুন। অথবা ফ্রেশ ভাবে কম্পিউটারে উইন্ডোজ সেটআপ করে দেখতে পারেন।

কম্পিউটার যেসব কারণে স্লো হয়ে থাকে তার মধ্যে কিছু বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এছাড়াও স্লো হলে করণীয় কি তাই সংক্ষেপে শুধু বলার চেষ্টা করলাম। পরবর্তী কোন আর্টিকেলে বিস্তারিত দেখানোর চেষ্টা করব কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায়। ততক্ষণ ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

ধন্যবাদ

আরো পড়ুনঃ

UPS কি? ইউপিএস কিভাবে কাজ করে।

নতুন কম্পিউটার ব্যবহারকারী জন্য ৫ টিপস।

জনপ্রিয় ৫টি পেইড সফটওয়্যারের ফ্রি অল্টারনেটিভস সফটওয়্যার।

Projutki Gyan

প্রযুক্তি জ্ঞান ডট কমে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। বাংলা ভাষায় উন্নতমানের আর্টিকেল উপহার দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে প্রযুক্তি জ্ঞান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!